মুঠোফোন জুড়ে বাবার সাথে একটাও ছবি নেই
কখনোই বলা হয়নি-
বাবা, চলো একটা সেলফি তুলি।
কখনোই বলিনি –
বাবা,এ পাশটায় দাঁড়াও তোমার একটি ছবি নিই।
বাইরের কঠিন আবরণটা ভেদ করে
কখনোই ভিতরের মানুষটাকে ব্যবচ্ছেদ করা হয়নি,
আবদার গুলোও যেত মায়ের মাধ্যমে।
আমরা যারা ভাগ্যকরে রাগী বাবা পেয়েছি
তারা কখনোই কাঁধের উপর লেপ্টে পড়ে
বাবাকে বলতে পারিনি-
বাবা,তোমাকে ভালোবাসি!
সহজেই বাবার চোখে জল দেখিনি,
তবে বাবার তীক্ষ্ণ দায়িত্বজ্ঞান বুঝিয়ে দেয়
মাথার উপরের ছাদটা শক্ত হওয়া কতটা জরুরী!
ঠিক নদীর মত-
বন-বাদারের গাছের মত
অব্যক্ত অভিমানী মানুষটি বরাবরেই নেপথ্যে থেকে যায়।
পুরুষ মানুষের এই এক জ্বালা!
দুঃখগুলো খুঁড়ে খেলেও সবার মত যায় না বলা
থাকে না জীবনের কোন ঋতুতেই অভিযোগের ফাগুন,
বুঝানো যায় না কারো কাছেই
কতটা দায়িত্ব কাঁধে
বুকের মধ্যে পাথর চেপে
দিতে হয় মা-বাবার মুখে আগুন।
চিরকাল শুনে যেতে হয়
তোমার কোন আবেগ নেই
কেবল দায়িত্ব আর দায়িত্ব করেই কাটিয়ে দিচ্ছো একটি শৃঙ্খলিত জীবন,
আমরা কী কখনোই ভেবে দেখি
তাঁকে নিজের সাথে বাকি পাঁচটি মুখকেও বাঁচিয়ে রাখতে হয় আমৃত্যু?
তাঁর কাছে নিজের বয়স্ক শার্টটির চেয়ে
ছেলের নতুন ইউনিফর্মের মূল্য অনেক বেশি!
সত্যিই!আমরা কখনোই বাবার কাঁধে লেপ্টে পড়ে
আদুরে গলায় বলতে পারিনি-
বাবা, তোমাকে ভালোবাসি।
সেন্ট্রাল পরীক্ষার সময় যখন মা’কে প্রণাম করতাম-
মা বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলতো-
ভালোমতো লিখিস বাবা।
বাবাকে যখন প্রণাম করতে যেতাম-
করার আগেই থাক্ থাক্ বলে উঠতো,
অথচ সেই মানুষটাই
পানি আর নাস্তা নিয়ে ঘন্টাতিনেক সেন্টারের সামনে
জেল-খাটা কয়েদির মত দাঁড়িয়ে থাকার অভ্যাস করে নিতো পুরোদমে।
আমি সেই অপেক্ষারত মানুষটির মধ্যিখানে
ঘামার্ত পুরুষটির দায়িত্বের বন্ধনে
মায়ের জড়িয়ে ধরার মতই আকুল স্নেহ পাই।
তবু দৌঁড়ে এসে বলা হয়নি-
বাবা,তোমাকে খুব ভালোবাসি।
না বলাতে কেটে যায়
পুরো একটি শৈশব
পুরো একটি যৌবন
পুরো একটি বয়স বয়ে বেড়ানো জীবন,
কোন আপসোস নেই
কোন মন খারাপ নেই
বলতে না পারলেও ভালো তো বাসতে পারি!
ঠিক, বাবাদের মত.
কবিতা : বাবাকে বলা হয়নি
লেখক :জনি বড়ুয়া
Be First to Comment