তোমাদের জুটি খানা আমার বেশ লাগে, খুব ভালোবাসা বুঝি?
এমন একখানা কমেন্ট আমরা করতেই পারি, কেউ আমায় করতেই পারে।
প্রোফাইল আর কভার ফটোতে প্রচার পায় আমাদের জীবনের প্রাধান্য ব্যাক্তির।
মেমোরিতে আসা ফটো গুলো শেয়ার করে কিংবা যে কোন অনুষ্টানের সারাটা দিন একটা কাটিয়ে এক প্রকার জোর করে ধরে এনে মুচকি হাসির ছবিতে শ-খানিক লাইক কমেন্টেই প্রচার পাই আমরা বেশ খুশি কাপাল৷
ব্যাপারটা আসলে এমনটাই চলে আজকাল। কারো লাইফে প্রচুর প্যারা প্রতিদিন নতুন নতুন ছবি বা লেখা বা কমিক পোস্টে মানুষ আসলেই ভাবে, সে বেশ আছে।
মন খারাপের পোস্ট দেখলে আহা বলি। কেউ ডিপ্রেস আছে লেখা দেখলে আদিখ্যেতা বলি। কিংবা আজ মরব পোস্টে হা হা ও দিয়ে আসি।
আমরা আসলে কারো কষ্টে ঠিকঠাক কষ্ট পেতে জানি না।
সুখ গুলোই বেশ ভালোই লাগে।
ফেসবুকে দেওয়ার জন্য ঘন্টাখানিক কষ্ট করে তোলা ছবি বা ভিডিও পোস্টের আগে প্রায় সবাই খুলে ফেলে শাড়ি গয়না।
সব ছবি ঠিকঠাক হয় না। সব ছবি দেওয়া হয় না। ডিলিট হয় প্রচুর ছবি। কোন টা হাসি আছে চোখ বন্ধ, কোনটায় খোলা হাসিটা ঠিকঠাক নেই৷ কিংবা নেই সেই আর্কষনীয় ভাবটা চোখে মুখে।
সাইটে, কাছে, দূরে, মুখ খুলে দাঁত দেখিয়ে হাল্কা ঠোঁট খুলে অনেক ভাবেই তোলা ছবি যা ঠিকঠাক লাগে তা একটু ইডিট করে পারফেক্ট বানিয়ে আমরা তা সোস্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করি।
এককে টা ছবিকে সুখী জীবনের অংশ ভেবে আমরা ভালোবাসার বন্যায় ভাসি।
আমরা অনেকে প্রোফাইল পিকে প্রেমে পড়ি, প্রেমে পড়ি আবেগী লেখার।
কিন্তু মানুষ টা হয়ত আসলে তা না।
আমাদের জীবন টাও ঠিক তেমন, কিছু কষ্ট কিছু দুঃখ, আকাঁবাকা জুট ঝামেলা কিছুটা হাসি, কিছুটা বিরক্তি সবটা মিলেই নিত্যতা। তবে সব কিছুকে বড্ড আনসোস্যাল ভাবি আমরা, হাসিটাই শুধু সোস্যাল আজকাল।
হাজার হাজার ফলোয়ার যার বিশ্বাস কর তার খুব একটা প্রিয় মানুষ নেই সাথে বসে গল্পে গল্পে রাত পার করার।
সবার নেই তা না। সে সব ফলোয়ার যতক্ষন নিউজফিটে জুড়ে তা আনাগোনা করবে ততক্ষন রাখবে খবর। ভাসবে ভালোবাসায়৷ তুমি এক সাপ্তাহ না আসো অনলাইন। কেউ খবর নিবে না। মাতছে তারা অন্য কিছুতে।
কারণ এখন মানুষের পরিচিতি শুধু ওটাই, হাজার খানিক ফলোয়ারে বেশি হলে দুই জনের কাছে তোমার নাম্বার আছে। তাও প্রয়োজন না হলে কেউ ফোন দিবে না৷ মা কিংবা প্রিয় মানুষ টা ছাড়া।
অনলাইন নাই তো খবরে নাই। আজকাল খুব সিরিয়াস রিলেশন ও অনলাইন নাই তো তার খবর পাওয়ার কোন স্কোপ নাই। নেই কোন ফ্যামিলি বা ফ্রেন্ডের নাম্বার। ব্লক করলেই প্রোফাইল দেখা যায় না। বুঝা যায় না সেও কি পাচ্ছে কষ্ট নাকি মাতছে অন্য ভুবনে?
বিষয়টা কি ভীষণ রকম স্বাভাবিক। তা নিয়ে ভাবার ও সময় নেই কারো।
সাথে নেই প্রিয় মানুষটা যতক্ষন তা প্রোফাইল পিকচার চেঞ্জ করে মানুষ বুঝতে পারে মতো স্ট্যাটাস না দেয় ততক্ষন আসলে কারো বুঝার সধ্য নেই যে ওরা আর সাথে নেই।
কি অদ্ভুত সাধারণ ব্যাপার।
কেউ কেউ দুইদিন পর পর বাইরে গিয়ে ছবি দিচ্ছে ভিডিও বানাচ্ছে।
আমরা দীর্ঘশ্বাস ফেলি, বড্ড স্বাধীন জীবন। তবে ঘরে ফিরে তার ক্লান্তি কেউ টের পাবে না আজীবন। যদি সে কোন স্ট্যাটাস না দেয়।
কেউ বাচ্চার সাথে রোজ ভিডিও ছাড়ছে। লোকে বলছে বড্ড টাইম কাটাও বুঝি?
বিশ্বাস করার তো জো নেই যে, মাত্র মিনিট দশেক এর জন্য বাচ্চাকে কোলে তুলে ছবি তুলেছে ঘরে হাজার কাজ সেরে।
কারো প্রিয় মানুষ টা খুব হাসিখুশি, অন্য দেখে বলে এই সিরিয়াস লোক টা যদি সামান্য এমন হতো।
কিন্ত হাসিখুশি লোক টা প্রিয় মানুষ প্রায়শ বিব্রত হয় তার এমন আচরণে।
ভাবে একটু সিরিয়াস হলে কি হয়?
কেউ শখ করে শাড়ি আনে, কেউ গচ্ছা ভরা টাকা দেয়, নিজের পছন্দে কেনার জন্য।
দুজনেরেই আফসোস রয়ে যায়, আমার কি কোন ইচ্ছে নাই?
কিংবা, তোমার কি ইচ্ছে হয় না একখানা শাড়ি পছন্দ করে আনো।
আলমারি কয়েশ শাড়িও ফিকে হয় যায়, এই আফসোসে।
বাস্তব জীবনে সবার প্রাপ্তি থেকে অপ্রাপ্তির ঝুলি এত ভারী, ভীষণ রকম লজ্জা পায় আমরা তা সামনে আনতে।
আড্ডার কিছু ছবি ফেসবুকে দিলেই আসলে বুঝার জো নেই যে, কয়েক বছর পর ছিল সে দেখা হওয়া, আর কখনো হয়ে উঠে নি সে সবার সাথে আড্ডা।
সব মানুষের সাথে আড্ডা জমে না। ছবি জমে। সব মানুষের সাথে মিল হয় না,ছবিতে সর্ম্পক টা মিলিয়ে যায়, পায় লাভ রিয়েক্ট।
মুখোশ ধারী এই দুনিয়া টা বড্ড রঙিন হাত বাড়ালে ছুয়ে যায় হাজার বেলুন।
মুখোশ খুললে নিজের প্রতি বিরক্ত আমরা, ভীষণ রকম বেমানান। বাথরুমে তাই লম্বা আয়না থাকে না কারো। নিজের প্রতিই বড্ড অনীহা আমাদের।
পারফেক্ট প্রোফাইল এ মানুষের পারফেক্ট লাইফের রিফ্লেক্ট কখনো হয় না।
যারা প্রিয় মানুষ এর হাতে পছন্দের চমচম পায়, এক জুড়া জুতো পায়, ব্যাগের সাইট ব্যাগে এক পাতা টিপ পায়, সে গুলো কখনো পারফেক্ট টাইমে হয় না, ক্যামেরা টা তাক করে থাকে না সত্যি কারের হাসিটা ক্লিক করার জন্য।
আমরা এত বেশি অভিনয়ে ডুবেছি, সত্য মিথ্যা বিচার যেন বড্ড বেমানান৷
সব কিছুই ঝকঝকে হওয়া চায়, ছবি গুলো ইডিট চায়, আজকাল ফেসবুকের সর্ম্পক ও ঝকঝকে ইডিট চায়, মা- বাবা, ভাই- বোন, বন্ধু, কাজিন, সবটা যেন লাল নীল বেগুনী বেলুনের মতো ছড়িয়ে রইলেই শোভা বাড়ায়।আমরা বড্ড রকম আটকে যাচ্ছি মিথ্যা দুনিয়ায়। খোলস ছাড়তেই কেউই রাজি নয়। কেউই নয়। ওতেই বড় স্বস্তি পায়।
সংগৃহিত : ফেসবুক থেকে
শিরোনাম : মিথ্যা দুনিয়ায় আটকে পড়ছি
লেখিকা : দোলনা বড়ুয়া তৃষা
Be First to Comment