Press "Enter" to skip to content

সর্ম্পকের তিক্ততা : দোলনা বড়ুয়া

মিরার সাথে বিয়ের তিন মাস পর সুযোগ করে যখন হানিমুনে যাওয়ার জন্য বের হচ্ছিলাম, মা এসে বলল ইতু আর মিতু কেও নিয়ে যেতে। ওরা যেতে চাইছে, না নিলে মন খারাপ করবে।
আমি বেল্টের হুক লাগাচ্ছিলাম। একপাশ হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম মায়ের দিকে। তারপর চোখ নামিয়ে বললাম, ‘ওদের তো যাওয়ার কথা ছিলো না, তো মন খারাপের কথা আসছে কোত্থেকে?’
মা আমার উত্তরে খুশি হয়নি, পর্দা নেড়ে বের হয়ে যেতে যেতে বলল, ‘বাচ্চা মানুষ কখন কী ইচ্ছে হয়!
মিরা আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। ওকে বললাম, ‘তুমি তাকিয়ে আছো কেন? তাড়াতাড়ি রেডি হও।’
আমিও বের হলাম মায়ের পিছু পিছু। ইতু আর মিতু আমার বোনের মেয়ে। দিদি আর দাদা দুজনেই চাকরি করে। তাই ওদের সকালে এইখানে নামিয়ে দিয়ে যায়। নতুন মামী পেয়ে বেশ খুশি ওরা। তাই তাদেরও ইচ্ছে হচ্ছে হয়তো যাওয়ার। এজন্যে চোখ মুখ কালো করে রেখেছে। সারাদিন মা ছাড়া থাকে, ওরা বায়না করেছে, তাই হয়ত মা বলতে বাধ্য হয়েছে।
আমি ইতু-মিতুর কাছে গিয়ে বললাম, ‘তোমাদের যেতে ইচ্ছে হচ্ছে?’
একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ল।
আমি মিতুকে কোলে নিয়ে বললাম, ‘এখন তো আমরা যাচ্ছি ছোট জায়গায়, বাসে করে। তোমাদের ঘুম এলে ঘুমাবে কোথায়?
ইতু বড়, ও বলে, ‘আমরা ঘুমাব না।’
আমি হেসে ওর গাল টিপে দিলাম। বললাম, ‘আগামী মাসে মামার আরেকটা লম্বা ছুটি আছে, তখন মামী, দিদা, তোমার মা, তোমরা, আমি সবাই মিলে একসাথে বড় গাড়ীতে করে গান বাজাতে বাজাতে যাবো। অনেক মজা হবে। ঠিক আছে?
দুইজনের এই অফারটা বেশ ভালো লাগলো, এক সাথে মাথা নাড়লো। ওদের গালে চুমু দিয়ে আমি চলে আসছিলাম, মা চেয়ার ধরে দাঁড়িয়ে ছিলো। বলল, ‘মিথ্যা বললি কেন? তোরা তো গাড়ি নিয়ে যাচ্ছিস।’
মিরা লাগেজ টেনে আনছে রুম থেকে। মায়ের কথা শুনে সেও দাঁড়িয়ে গেল।
বললাম, ‘মা, আমরা যাবো বলে ঠিক করেছি, তাই। ওদের পরে নিয়ে যাবো, তুমি সহ।’
মা গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে বলে, ‘বিয়ে হয়ছে তো অনেক দিন হলো, এখন এত কী? আর তোর বাবা আমাকে নিয়ে বেড়াতে যাওয়ার সময় বোন বোনের বাচ্চা সব নিতো সাথে।
আমি লাগেজ টেনে নিয়ে বের হতে হতে বললাম, ‘তাই তুমিও বলছো? আমি দেখেছি এই নিয়ে বাবাকে তুমি কত কথা শোনাতে, তুমি কি চাও তোমার ছেলেও আজীবন এইসব কথা শুনে যাক?’
মা কিছু বলল না। দুইজনে মাকে নমস্কার করে বের হয়ে গেলাম। মা মিরার শাড়ির কোনা টেনে একটা গিট দিয়ে দিলো। বলল, ‘চুল খোলা রেখে পাহাড় জংগলে ঘুরে বেড়িও না।
মিরা মাথা নেড়ে সায় দিলো। ইতু-মিতুকে আদর করে দিলো, বলল, ‘আমি অনেকগুলো চকলেট নিয়ে আসবো।
গাড়িতে উঠতেই মিরা বলল, ‘নিতে পারতাম ওদের।’
‘না, আমরা যাচ্ছি নিজেরা একটু টাইম কাটাতে। ওদের নিলে তোমাকে ওদের পেছনে টাইম দিতে হবে। জীবনে অনেকবার ওদের নিয়ে যেতে পারবো। কিন্তু তোমার আমার মধ্যে এখন যে ব্যাপারটা আছে, তা পরে নাও থাকতে পারে।’
গাড়ী চলতে শুরু করলে মিরা কাঁধে মাথা রাখে। জানলা খোলা তাই সকালের বাতাসে ওর চুল আমার মুখে উড়ে আসছে।
ছোটবেলা থেকে প্রচুর দুষ্ট ছিলাম। বন্ধু মহলে কখনো আমায় কেউ কান্না করাতে পারতো না। কিন্তু বৃহস্পতিবারে যখন বাবা ঘরে আসতো, সেই দুইদিন আমার ভীষণ রকম মন খারাপ থাকতো।
বাবাকে ভীষণ ভালোবাসতাম। ঠাম্মি আমায় খুব আদর করতো, আর মা তো মা। তিনজনের টানাপোড়েন দেখে ভীষণ খারাপ লাগতো। প্রথম প্রথম বাবা এলে ঠাম্মি এটা ওটা বলে যখন বাবাকে রাগাতো, মায়ের রান্নাঘরে কান্না দেখে ঠাম্মিকে ভীষণ রকম ভিলেন লাগতো।
আমাকে ভাত খাওয়ানোর সময় মা যখন আমার দিকে না তাকিয়ে ভাত মুখে দিতো, আমার গলায় ভাত আটকে যেতো। একটু যখন বড় হলাম, তখন বাবার জন্য ভীষণ রকম মায়া লাগতো, দুইদিনের জ অনেক শক্ত হয়ে গিয়েছে। মাকে আর কেউ কান্না করাতে পারে না। কথার উত্তর কথাতে, নইলে চরমন্য বাড়ি এসেও শান্তি পেত না।
আরো বড় যখন হলাম, তখন মা চিৎকারে মাকে কেউ আর হারাতে পারতো না। আমার ভীষণ মমতা ভরা মাকে একটু একটু করে ভিলেন ভাবতে লাগলাম। ব্যাপারটা যথেষ্ট মন খারাপের ছিলো আমার কাছে। বাবা একসময় সারাদিন বাড়িতেই থাকতো, কারো কথায় মাকে দোষ দিয়ে কথা শোনানোর সময় পার হয়ে গেলো, কারণ মা তখন সব।
একটা সময়ের পর সংসারে কর্তার চেয়ে কর্ত্রীর কর্তৃত্ব বেশি হয়ে যায়। একা দায়িত্ব সামলাতে সামলাতে তারাই সবটা জুড়ে বসে। কিন্তু মাকে বাবার সাথে খুব একটা ভালো সময় কাটাতে দেখিনি। বাবা চাইলেও না। কখনো দেখিনি দুজন এক সাথে হাটতে বের হচ্ছে, কিংবা মা-বাবা টিভি দেখে দেখে পান চিবিয়ে চিবিয়ে আস্তে আস্তে কথা বলছে।
আমার কেন যেন মনে হতো এইসবের জন্য ঠাম্মি দায়ী। শেষ বয়সে মা ঠাম্মিকে কখনো মা ডাকেনি আর। এইটা নিয়ে ঠাম্মি কয়েক বার আফসোস করে বলেছে, কাজ হয়নি।
মায়ের সাথে ছোট ঠাম্মির খুব ভাব ছিলো। আগে যখন মা কান্না করত, উনি এসে মায়ের কাছে বসতেন, বুঝাতেন। এইটা ওটা এনে খাওয়াতেন। মায়ের পছন্দের কিছু রান্না করলে, যেমন- কচু শাক, ছোট মাছ, হলুদ ফুলের ভর্তা, কাচা মরিচের তরকারি, এক বাটি লুকিয়ে এনে মাকে দিতেন। মাও সবার খাওয়া শেষে তা দিয়ে খেতো।
ছোট ঠাম্মির দুইটা মেয়ে। বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর কেউ ছিল না। তবে মা ভীষণ রকম সেবা করেছিলো। কোলে তুলে স্নান করিয়েছিলো। খাওয়াতো। মারা গিয়েছেন উনি। অথচ আমার ঠাম্মি যখন খাট থেকে পড়ে পা ভাঙ্গে, একটা কাজের মেয়ে রাখতে হয়েছিলো। কারণ বিছানায় পায়খানা প্রস্রাব মা ধরবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়।
ওষুধ খাওয়াতো মা, ভাত দিতো, ভালো রান্না করে থালে এনে রাখতো টেবিলে। কখনো পাশে দাঁড়িয়ে খাওয়াতে দেখিনি। একসময় মনে হতো, মা বেশি করছে।
কিন্তু আরো যখন বয়স হলো, নিজেও বিভিন্ন সর্ম্পকের টানাপোড়েন খেয়ে বুঝেছি দোষটা পুরোপুরি মায়ের ছিলো না। ব্যাপারটা একদিনে হয়নি।
কত শখ করে মা বাপের বাড়ি থেকে শাড়ি আনলেও ঠাম্মি তা নিয়ে কথা শোনাতো। মায়ের পছন্দের জিনিস ঠাম্মি পিসিদের দিয়ে দিতো। একসময় মা কিছুই দিতো না আর।
বাবার সাথে মাকে কোথাও যেতে দেখিনি। ঠাম্মি কাপড় পরে রেডি থাকতো। কিংবা পিসিরা আসতো। মা জেদ ধরতো, যাবে না। তবে যেতে হতো, হাসতে হতো।
ঈদের ছুটিতে বোনাস পেলাম, কয়েক প্যাকেট কাপড় নিয়ে ঢুকলাম। মায়ের রুমে আমি আর মিরা।ছুটির দিন, দিদিও ছিলো। ইতু, মিতু, দাদা, ওকে, মাকে সবাইকে কাপড় দিলাম।
সবার পছন্দ হলো। বললাম মিরা পছন্দ করেছে সবারটা। দিদি মিরার হাতে প্যাকেট দেখে বলে, ‘আর ওরটা? দেখি দেখি কেমন হলো।’
মিরাও খুব উৎসাহ নিয়ে দেখাচ্ছে। দিদি বেশ প্রসংশা করল।
মা বলল, ‘তোর পছন্দ হলে তুই নে এইটা। তোরটা বৌমাকে দিয়ে দে। একইতো দাম দেখি। আর কফি কালারটা তোকে বেশি মানাবে, ফর্সা তো, ও একটু শ্যামলা তাই ওকে গোলাপিটা ভালো লাগবে।’
মিরাও বলল, ‘আচ্ছা।
আমি দুইটা শাড়িই ভাজ করে বললাম, ‘তোর এইটা পছন্দ? তাহলে এইটা দে, আমি একই রকম আরেকটা নিয়ে আসি। মিরা তোদেরটা পছন্দ করেছে, আর ওরটা আমি।”
দিদি বুঝতে পারল। ও তাড়াতাড়ি বলল, ‘আরে না না, ঠিক আছে। দুইটাই তো ভালো। আর তুই যখন পছন্দ করে দিয়েছিস আমি কেন নেবো? তোর দাদা আমায় কিছু পছন্দ করে দিলে কি আমি দিতাম কাউকে?’
মা চুপ করে রইলো।
কিছুক্ষণ পর দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। কারণ মায়ের পছন্দের শাড়িটা সবসময় বাবা পিসিদের হাতে তুলে দিয়েছিলো। শেষের দিকে মা আর কোনও অনুষ্ঠানে নতুন শাড়ি পরতো না।
এইভাবে আমি মিরার পাশে থাকা টা হয়ত মা হিসেবে মায়ের ভালো লাগার কথা ছিলো। কিন্তু আমরা মানুষেরা যখন একটা পুরো জীবন অপ্রাপ্তির রাগে জ্বলতে থাকি তখন অন্য কেউ যখন সবটা পেতে থাকে আমরা মানতে পারি না। জানি ব্যাপারটা।
বুঝি তাও মানতে পারি না। স্বাভাবিক মানুষের নিয়ম বোধহয় এইটা।
আমি শুধু চাই, মিরা আর মায়ের মধ্যে মিল হোক না হোক, তিক্ততায় যেন ভরে না যায়। নাহলে শেষ বয়সে আমার মাও যে একা হয়ে পড়বে!
ছুটির দিনে বসে আছি। আমি বই পড়ছি, মিরা টিভি দেখছে।
মা বলল, ‘আমার জন্য একটু গরম পানি করে দাওতো। হাটু ব্যাথা করছে।’
মিরা একটু আগে রান্না ঘর থেকে এলো। তাই চুপ করে বসে টিভি দেখছে। বলল, ‘এখন পারবো না।’
হয়ত ভেবেছে আমি কিছু বলব না।
উঠছে না দেখে আমি বললাম, ‘কিরে মিরা, মাকে গরম পানি দাও। আমি তোমাকে সব সময় সার্পোট করি বলে এই না যে তুমি আমার মাকে অবহেলা বা অসম্মান করতে পারো। আমি চাই তোমাদের মাঝে তিতক্তা না আসুক, কিন্তু মিষ্টতাতো তোমাকেই বানাতে হবে।
কিছু কাজ যা মা পারে না তা তোমাকে করতে হবে। তুমি যদি ব্যস্ত থাকতে আমিই করে দিতাম। কিন্তু তুমি ইচ্ছে করে মায়ের কাজ করতে না চাইলে তা আমি মানতে পারবো না।
মা রুম থেকে সবটা শুনছে। মিরা উঠে গেল রান্নাঘরের দিকে।
কিছুদিন পর আমি টেবিলে বসে মিরাকে বলছিলাম। আজ একটু খিচুড়ি রান্না করো আর মাংস ভুনা, সাথে বেগুন ভাজা।
তখন দেখি মা কাপড় পরে রেডি হয়ে কোথায় যেন যাচ্ছে।
– মা কোথায় যাচ্ছো তুমি?
– একটু বাইরে যাচ্ছি, মন্দিরে যাবো, একটু অন্য কাজও আছে।
– তো আমাকে বলতে।
– তোর আর এখন সময় আছে? বউয়ের আঁচল ধরে ঘুরতেই তো টাইম নেই আর।
– মা, দাঁড়াও আমি রেডি হয়ে আসছি। পাঁচ মিনিট।
মায়ের সাথে রিকশায় উঠলাম। কাল রাতে বৃষ্টি হয়েছে, রাস্তায় এখনো হাল্কা পানি জমে আছে। আছে গাছে গাছে স্নিগ্ধতা।
মায়ের সাথে বের হওয়াই মা হয়ত খুশি হয়েছে। তবে মুখ ভার করে রেখেছে। হাল্কা বাতাস আছে।
মন্দির থেকে ফেরার পথে মাকে বললাম, ‘আইসক্রিম খাবে?’
মা অবাক চোখে তাকিয়ে বলে, ‘না।’
‘চলো, তুমি আমি অনেক দিন আইসক্রিম খাই না।
মা চুপ করে আছে। এই আইসক্রিম খাওয়া নিয়ে আমার আর মায়ের অনেক মজার স্মৃতি আছে। কলেজে থাকতে প্রায় বিকেল বেলা আমি মাকে নিয়ে যেতাম কলেজের পাশে একটা দোকানে। খুব ভালো ছিলো আইসক্রিমটা।
মাঝেমধ্যে মাকে রাতেও টেনে নিয়ে বের হতে যেতাম। কারণ আমি দেখতাম মা অনেক দিন ঘর ছেড়ে বের না হতে হতে বিরক্ত হয়ে পড়তো।
আমাকে বকা দিতো। তবে খুশি হতো।
দোকানের সামনে একটা বেঞ্চে বসলাম। মাকে তার পছন্দের কাপ আইসক্রিম দিয়ে আমিও বসলাম।
‘অনেক দিন পর খাচ্ছি আইসক্রিম, তাই না মা?’
মা আমার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘এখন কি তোর মায়ের দিকে খেয়াল আছে? সব সময় বউয়ের ঢাল হয়ে দাঁড়াস। যেন বউকে মায়ের কাছ থেকে রক্ষা করতে হবে। আমি কি তোর বউ কে জ্বালাই? তোর ঠাম্মিরা আমাদের যে পরিমাণ জ্বালিয়েছে, কথার খোটায় রাখতো সারাক্ষন, তোর বাবাকে উল্টো পাল্টা বুঝাতো আমি কি আর ওসব করি?
‘মা আমি জানি তুমি অনেক ভালো। মিরাও ভালো মা। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাকে তোমার আর মিরার মাঝে থাকতেই হয় মা। কারণ আমি তোমাকে অনেক কান্না করতে দেখেছি। বাবার এই গা বাঁচিয়ে চলার অভ্যাস যে তোমাকে কত কষ্ট দিয়েছে তা আমার চেয়ে ভালো আর কেউ জানে না।
তুমি না পেতে পেতে একসময় আশা রাখা ছেড়ে দিয়েছো। বাবার উপর তোমার রাগ জমতে জমতে তা ঠাম্মির প্রতি ঘৃণায় রূপ নিয়েছিলো।
শুধু একটু মায়া আর ভালো সর্ম্পকের কারণে তুমি ছোট ঠাম্মিকে কী সেবা করতে। আর বাবার আর ঠাম্মির প্রতি দায়িত্ব পালন করেছ কিন্তু মন থেকে ওদের তুমি মায়া দেখাতে পারোনি মা। আমি তোমার ছেলে, তোমাকে কখনো ভুল বুঝিনি। আমি জানি, আমার বাস্তব জীবনেও আমি এমন অনেক সর্ম্পক পেয়েছি মা।
আমি জানি তিক্ততা ভরে গেলে তাকে মন থেকে সত্যিই আর ভালোবাসা যায় না। আমি চাই না তোমার আর মিরার মধ্যে এমন কিছু হোক, মিরাকে কখনো আমায় ঘৃণা করতে না হোক।
আমি চলে যাওয়ার পর মিরা আমার জন্য এক ফোঁটা পানিও না ফেলুক আমি চাই না। তোমাকে শেষ বয়সে একা হয়ে যেতে না হোক। এমন তিতক্তা বাসা না বাঁধোক যাতে মিরা তোমায় মা ডাকতে বিরক্ত হয়।
মা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। আইসক্রিম খেয়ে উঠে পরে। ব্যাগ খুলে দোকানের দিকে যায়।
– টাকা দিয়ে দিয়েছি মা।
– আমরা খেলাম, বৌমার জন্য নিবি না?
আমি হেসে রিক্সা ডাকলাম। মা যত্ন করে ধরে রেখেছে আইসক্রিমটা।
মিরাকে বললাম, ‘মা এনেছে তোমার জন্য আইসক্রিম দেখো।’
মিরার চোখে মুখে বাচ্চাদের মতো খুশি ছিলো।
খেতে বসে বড় টুকরোটা মায়ের পাতে দিয়েই যেন ওর শান্তি লাগলো। খিচুড়ি তে লবণ বেশি হয়েছে বলাতে মা বলে,
‘যেমন হয়েছে তেমন খা, কষ্ট করে বানিয়েছে ও। পরেরবার আরো ভালো হবে।’
মিরাও সুর মেলায়, ‘হু, কষ্ট করে রেঁধেছি, যেমন হয়েছে খেতে হবে।
আমাকে আজকাল আর ওদের মাঝখানে দাঁড়াতে হয় না। তবে মা মাঝেমধ্যে আমার আর মিরার মাঝখানে আসে আমাদের ঝগড়া হলে। আমি বাবার ছবির দিকে তাকিয়ে থাকি, ভাবি বাবা তুমিও তো ভাগীদার ছিলে এই মিষ্টি বাতাসের। তোমার ছোট্ট ছোট্ট ভুল গুলো শুধু আমি রিপিট করি নি।
তিক্ততা ব্যাপারটা একদিনে হয় না। তার জন্য আমরা নিজেরাই দায়ী থাকি। কী ভীষণ রকম সত্যটা আমরা অন্যকে দোষ দিয়ে দিব্যি জীবন কাটিয়ে দিই!
সংগৃহিত : ফেসবুক থেকে
শিরোনাম : : সর্ম্পকের তিক্ততা
লেখিকা : দোলনা বড়ুয়া তৃষা

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

COPYRIGHT © 2018 | BARUA GROUP